টাঙ্গাইলে করোনার ভাইরাস উপসর্গ নিয়ে (কোভিট-১৯ এ) ১০ জনের বেশী রোগীর নমুনা সংগ্রহ নিচ্ছে না উপজেলা স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য বিভাগ।
করোনা উপসর্গ নিয়ে নমুনা পরীক্ষা করাতে এসে নমুনা দিতে না পেরে এলাকার শতশত রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আক্রান্ত ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে।টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে মির্জাপুর উপজেলায় এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫ জন। টাঙ্গাইরে সিভিল সার্জন ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার জন্য নানা সংকট থাকায় প্রতি উপজেলায় ১০ জনের বেশী করোনার উপসর্গ রোগীর নমুনা নেওয়া যাচ্ছে না। নমুনা সংগ্রহ বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। এদিকে বৃহত্তর মির্জাপুর উপজেলায় প্রতি দিন লাফিয়ে লাফিয়ে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পরেছে।
শুক্রবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৭-৮ দিন ধরে চলছে করোনা উপসর্গ নিয়ে নমুনা দিতে আসা রোগীদের নানা বিড়ম্বনা ও হয়রানী। সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথাসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এসে রোগীরা জানতে পারছেন এখানে ১০ জনের বেশী রোগীর নমুনা নেওয়া হবে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে তারা চলে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন।
টাঙ্গাইল জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলের ১২ উপজেলায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২৯৬ জন। সর্বাধিক আক্রান্ত হয়েছে মির্জাপুর উপজেলায়। দিন দিন এ উপজেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। করোনায় এ পর্যন্ত মির্জাপুরে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫ জন। ঢাকায় একজন ও মির্জাপুরে একজনসহ দুইজন মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোভিট-১৯ এ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন টাঙ্গাইল সদরে ৩৬ জন, নাগরপুরে ৩০ জন, দেলদুয়ারে ২৬ জন, মারা গেছেন একজন, কালিহাতিতে ২৬ জন, মধুপুরে ২১ জন, ধনবাড়িতে ১৭ জন, মারা গেছেন একজন, গোপালপুরে ১৭ জন, ঘাটাইলে ১৭ জন, মারা গেছেন দুই জন, ভুয়াপুরে ১২ জন, সখীপুরে ১১ জন এবং বাসাইলে ৩ জনসহ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩০০ জন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ এ পর্যন্ত ৫৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় মারা গেছেন ঢাকাস্থ মির্জাপুর উপজেলা কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সহ সভাপতি এবং মির্জাপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক এবং বহুরিয়া ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ি সরকার বাড়ি গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার মো. খলিলুর রহমান তোতা এবং কামারপাড়া গ্রামের রেণু বেগম।এ পর্যন্ত ৮৭০ জনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ৫৫ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন যা টাঙ্গাইল জেলার ১২ উপজেলার মধ্যে সর্বাধিক।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবদুল মালেক মোস্তাকিম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুবায়ের হোসেন এবং মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সায়েদুর রহমান বলেন, মির্জাপুর একটি জনবহুল গুরুত্ব উপজেলা। এখানে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও গাজীপুর থেকে লোকজন বিভিন্ন কৌশলে প্রবেশ করছেন। গোড়াইতে রয়েছে শিল্পাঞ্চল। বিপুল সংখ্যক লোকজনকে সচেতন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনের চলার জন্য প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দিন রাত মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। টাঙ্গাইলের ৮ টি আসনের সংসদ সদস্যগণ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, র্যাব-১২ টাঙ্গাইল, ১২ উপজেলার নির্বাহী অফিসার, এসিল্যান্ড, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা, গণমাধ্যমকর্মী, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সহকারীরা করোনা ভাইরাস নির্মূলে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার জন্য জনগণকে সচেতন করতে দিনরাত নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলে সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান,ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার জন্য নানা সংকট থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় প্রতি উপজেলায় ১০ জনের বেশী করোনার উপসর্গ রোগীর নমুনা নেওয়া যাচ্ছে না। প্রতিটি উপজেলায় নমুনা সংগ্রহ বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। করোনায় নতুন ভাবে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন।
ইত্তেফাক/এমআরএম