ফেনীতে এক ছাত্রের অভিভাবকের কাছে বকেয়া বেতন চাওয়ায় মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও স্থানীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মামুনুর রশীদকে ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করা হয়েছে। রবিবার বিকেলে ফেনী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে অবস্থিত দারুল ঈমান ইসলামী মাদ্রাসার সামনে এই হামলা চালানো হয়। হামলা চালানো ভিডিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে এই নিয়ে জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
হামলাকারী ফেনী শহরের পূর্ব উকিল পাড়ার মুন্সি পুকুরের পূর্ব পাশের আবুল বশরের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। তাকে আসামি করে মাদ্রাসা শিক্ষক বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এই নিয়ে আহত মাদ্রাসা শিক্ষক মামুনুর রশীদ গণমাধ্যমে সঙ্গে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
হামলাকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মামুনের সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো। এটা নিচক ভুল বুঝাবুঝি। এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আর কখনো হবে না। আমি তা তাদের বৈঠকে জানিয়েছি।
ফেনী জেলা প্রাইভেট মাদ্রাসা এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ও ইসলামী আন্দোলন ফেনী জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মাওলানা একরামুল হক ভূঁঞা জানান, এটি অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক। আমরা তাকে বিচারের মুখোমুখি করেছে। সে মুচলেকা দিয়ে বলেছে এ ধরনের ঘটনা আর কখনো করবে না। অমানবিক আচরণে মানবিক আরচরণের মাধ্যমে সুরাহ করতে চেয়েছি।
ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: আলমগীর হোসেন মোবাইল ফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এই ঘটনায় অভিযুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আহত মাদ্রাসা শিক্ষক থানায় দায়েরকৃত এজাহারে উল্লেখ করেন, জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে ওয়াছি আলম শান্ত ওই মাদ্রাসায় প্লে থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। চলতি বছর ফেনী আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসায় ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। বিদায়ী ছাত্রের দুমাসের প্রায় ৮ হাজার টাকা আবাসিক বকেয়া বেতন তিনি চাইতে গেলে সে প্রিন্সিপালের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ও ফেসবুকে প্রিন্সিপালের পোস্টে অরুচিকর কমেন্ট করে। প্রিন্সিপাল কমেন্ট করে প্রতি উত্তর দিলে সে আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তার জের ধরে মাদরাসা প্রাঙ্গণে তার উপর প্রকাশ্যে হামলা করে জাহাঙ্গীর।
সরকার দলীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা নাম না বলার শর্তে বলেন, এর আগেও জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত হামলারকারীর ছবি ও সিসিটিভি ফুটেজ ইতিমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযুক্ত মোঃ জাহাঙ্গীর ১নং ওয়ার্ডে মুন্সী পুকুরের পাশে তার বাড়ি। একজন আলেমের উপর এই ধরনের সন্ত্রাসী হামলার প্রশাসনের মাধ্যমে এই ঘটনার সুস্থ তদন্ত করে অভিযুক্তকে শাস্তির দাবী করেন। ভুক্তভোগী হাফেজ মাওলানা মামুনুর রশীদ সদর উপজেলার গোবিন্দপুরের মৃত মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে।
এ ঘটনায় সোমবার রাতে সালিশি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ফেনী জেলা প্রাইভেট মাদ্রাসা এসোসিয়েশনের সভাপতি মাওলানা নুরুল করিমের সভাপতিত্বে যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জিয়াউল আলম মিস্টার, ফেনী জেলা প্রাইভেট মাদ্রাসা এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ও ইসলামী আন্দোলন ফেনী জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী মাওলানা একরামুল হক ভূঁঞা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেন রাজন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আহত মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও স্থানীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মামুনুর রশীদ ও ছাত্রের অভিভাবক জাহাঙ্গীর আলম।
ইত্তেফাক/আরকেজি
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক