রোগীর স্বজনদের হামলায় ডা. আব্দুর রকিব খানের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পাঁচ আসামি গ্রেফতার হওয়ায় খুলনায় চিকিৎসকরা কর্মবিরতি স্থগিত করেছে। তবে, খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করা না হলে আবারো কর্মসূচি ঘোষণা করার আল্টিমেটাম দিয়েছে চিকিৎসকরা।
বৃহস্পতিবার (১৮জুন) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি স্থগিত ও সদর থানার ওসিকে প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, ‘রোগীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ৭২ ঘণ্টার জন্য স্থগিত করা হয়েছে। তবে ডা. রকিব হত্যা মামলার সব আসামিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার ও খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে পরবর্তীতে আলোচনা করে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই ওসিকে প্রত্যাহার করা না হলে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হবে না। সংবাদ সম্মেলনে বিএমএ খুলনার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মেহেদী নেওয়াজসহ চিকিৎসক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।’
এর আগে রোগীর স্বজনদের হামলায় চিকিৎসক আব্দুর রকিব খানের মৃত্যুর প্রতিবাদে এবং হামলার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তি এবং চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবিতে গত বুধবার দুপুরে নগরীর সাত রাস্তা মোড়ে বিএমএ ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে চিকিৎসকরা। পরে বিএমএ’র এক সভায় চিকিৎসক হামলার সঙ্গে জড়িত সকল সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার ও খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত খুলনা মহানগরীসহ জেলার সকল চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত রোগীরা চিকিৎসা সেবা না পেয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ে।
আরো পড়ুন: করোনা সংক্রমণ রোধে প্রতি জেলায় পিসিআর ল্যাব চেয়ে রিট
এদিকে পুলিশ জানায়, গত বুধবার রাতে গাজীপুরের টঙ্গী এবং খুলনার রূপসায় অভিযান চালিয়ে ডা. রকিব হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি জমির, আবুল আলী, গোলাম মোস্তফা ও খাদিজাকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া গত মঙ্গলবার রাতে এজাহারভুক্ত আরেক আসামি আব্দুর রহিমকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে রোগীর স্বজনদের হামলায় রাইসা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. আব্দুর রকিব খানের মৃত্যুর ঘটনায় তার ছোট ভাই খুলনা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম গত বুধবার দুপুরে চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরো ৮-১০জনকে আসামি করে খুলনা সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ জুন খুলনা মহানগরীর মোহাম্মদ নগরের পল্লবী সড়কের বাসিন্দা আবুল আলীর স্ত্রী শিউলী বেগমকে গল্লামারী এলাকার রাইসা ক্লিনিকে সিজার করা হয়। প্রসবের পর বাচ্চা ও মা সুস্থ ছিলেন। পরে রোগীর রক্তক্ষরণ শুরু হলে ১৫ জুন সকালে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। খুমেকের চিকিৎসকরাও রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে না পেরে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। ঢাকায় নেওয়ার পথে ওই দিন রাতে শিউলী বেগমের মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনার জেরে ১৫ জুন রাত পৌঁনে ৯টার দিকে শিউলীর আত্মীয়-স্বজনরা রাইসা ক্লিনিকে গিয়ে ক্লিনিকের মালিক ডা. রকিবকে মারধর করেন। এতে রকিবের মাথার পেছনে জখম হয়। তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে নগরীর গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডা. রকিবের মৃত্যু হয়।
ইত্তেফাক/এএএম
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক