সিলেটে বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হলেও কানাইঘাট ও সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার ( ১৩ জুলাই) দুপুরে সুরমা ও কুশিয়ারা অববাহিকায় পানি কিছু কমলেও বিকালে আবার চাপ বাড়ে। মূলত: ভারতের আসামে বরাক নদীতে ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেটের ৬ টি ও সুনামগঞ্জের ১১ টি সহ ১৭ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। এখনো এই দুই জেলার আড়াই লাখ লোক পানি বন্দী। বিভিন্ন স্থানে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগের শেষ নাই। অনেকের ঘরে বন্যার পানি থাকায় বেশ কয়েকদিন ধরে তারা চৌকির উপর বসবাস করছেন।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম সোমবার বিকালে ইত্তেফাককে বলেন, এখুনি কিছু বলা যায়না তবে ভারতের চোরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। এই ভাব অব্যাহত থাকলে সিলেট ও সুনামগঞ্জে পানি কমবে। চলমান বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে যে ঢলের পানি নেমেছে তা ভয়াবহ মন্তব্য করে বলেন, এখনো সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে বাড়িঘর, মাছের খামার, কৃষি ও রাস্তা ঘাটের। অনেক স্থানে ঢলের চাপে সড়ক ভেঙ্গে সেখানে খাল হয়ে গেছে। কোটি কোটি টাকার মাছের পোনা ভেসে গেছে।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এ নিয়ে তিনবারে বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় আউশ,আমনের হালি চারা ও শাক সবজির প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। সিলেট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক সালাহ উদ্দিন গতকাল সোমবার ইত্তেফাককে জানান,সিলেট জেলায় ৫ হাজার ১৭০ হেক্টর জমির আউশ ও ১৩৫ হেক্টর আমন বীজতলা নিমজ্জিত হয় তৃতীয়বারে বন্যায়। অন্যদিকে হাওরের ঢেউয়ের আঘাতে গ্রাম ও জনপদ ভাঙ্গছে। মানুষ ভিটে বাড়ী রক্ষায় প্রাণান্তকর চেষ্টায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সিলেটে সুরমা নদীর পানি সোমবার বিকাল ৩ টায় বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার, কানাইঘাটে ১ দশমিক ২৬ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জে ২৯ সেন্টিমিটার, ছাতকে ১ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার এবং অমলসীদে ৭ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা ৯৭ সেন্টিমিটার, শেরপুরে ৩৬ সেন্টিমিটার, সারি নদী ৬৩ সেন্টিমিটার উপর উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সিলেটে নদনদীর পানি স্থিতিশীল নয়। এই কমে আবার বিকালে বাড়ে-এমন অবস্থা চলছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের অবস্থায়। সোমবারও নগরীর অভিজাত এলাকা উপশহরের বিভিন্ন রাস্তায় পানি ছিল। তালতলা, কাজীরবাজার, শেখঘাট, তেররতন, কুশিঘাট এলাকায় সোমবার বিকালেও বন্যার পানি ছিল। ভরাট সুরমা নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশ হচ্ছে না। তাই পাহাড়ে বৃষ্টি হলেই নদীর পানি নগরীতে উঠে। একই অবস্থা সুনামগঞ্জ জেলা শহর ও ছাতক শহরেরও। এদিকে, সিলেটে সুরমার পানি নদীর দুকুল উপচে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করেছে। একই অবস্থা সুনাগঞ্জেরও।
ইত্তেফাক/এসআই
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক