মানিকগঞ্জে যমুনা ও পদ্মার পানি বেড়ে জেলার দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সেঙ্গে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর এবং ঘিওর হাটে নৌকার বেচা-বিক্রি জমে উঠেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখরিত থাকে হাটগুলো। বিক্রিও হচ্ছে শত শত নৌকা। চাম্বল, মেহগিনি, কড়ই, রেইনট্রি, গুলাপ, ডুমরা, শিশু প্রভৃতি গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি এসব নৌকা আকার ও মানভেদে প্রতিটি নৌকা বিক্রি হয় ২ থেকে ১০ হাজার টাকায়।
ঝিটকা আনন্দ মোহন উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এবং ঘিওর উপজেলার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ জুড়ে শত শত নৌকা সারিবদ্ধ করে সাজিয়ে বসে রয়েছে বিক্রেতারা। রাত পর্যন্ত চলে এই নৌকা কেনাবেচা।
ক্রেতারা বলছেন, পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নৌকার দামও বাড়ছে। অপরদিকে বিক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় নৌকা প্রতি দুই থেকে পাঁচশ টাকা খরচ বাড়লেও দাম আগেই মতই আছে।
জানা যায়, মানিকগঞ্জ জেলার চারপাশ দিয়ে নদী। এ জেলার ওপর দিয়ে পদ্মা-যমুনা, ধলেশ্বরী, ইছামতি ও কালীগঙ্গা নদী বয়ে গেছে। এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য খাল-বিল ও ডোবা-নালা। বর্ষাকাল আসলেই ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয়, হরিরামপুর ও সাটুরিয়ার নিন্মাঅঞ্চল প্লাবিত হয়। তখনই চলাচলের প্রধান বাহন হয়ে ওঠে নৌকা। এসব এলাকার মানুষের দৈনন্দিন কাজের সুবিধার্থে নদী ও খালের তীরবর্তী প্রতিটি পরিবারেই নিজস্ব নৌকা থাকে। যুগ যুগ ধরে নৌকা ওই সব অঞ্চলের ঐতিহ্য বহন করে আসছে।
ঘিওর উপজেলার গোলাপনগর এলাকা থেকে ঘিওর বাজারে নৌকা কিনতে আসা আফজান মিয়া বলেন, প্রতিবছর বর্ষার শুরুতেই নৌকা কিনতে হয়। এ বছরও নৌকা কিনতে এসেছি। শিমুল কাঠের ১১ হাত ডিঙি নৌকা কিনলাম ৩২শ’ টাকা দিয়ে। গত বছরের চেয়ে এ বছর নৌকার দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে।
ঘিওর বাজারের নৌকার ব্যাপারী হারুন শেখ বলেন, ঘিওরের নৌকার হাট অনেক বছরের পুরনো। এ হাট নৌকার জন্য বিখ্যাত। এ হাটে পার্শ্ববর্তী জেলা টাঙ্গাইলের নাগরপুর, ঢাকা জেলার সাভার ও সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে শত শত নৌকা আসে এখানে। মেহগনি, কড়ই, আম চাম্বল, রেইন্ট্রি গাছে কাঠ দিয়ে নৌকাগুলো তৈরি করা হয়। আকার ও মানভেদে প্রতিটি নৌকা বিক্রি হয় ২-১০ হাজার টাকায়।
ঝিটকা বাজারের নৌকা ব্যবসায়ী হারুন মিয়া জানান, আমরা পাইকাররা ঝিটকা, ঘিওর, বাঠুইমুড়ি, ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, বাইরাখালি ও বেঁরিবাধ থেকে কিনে এনে এখানে নৌকা বিক্রি করি। এজন্য আমাদের লাভ কম। তবে নিজেরা যারা তৈরি করে বিক্রি করে তাদের লাভ কিছুটা বেশি, কেননা নিজেরা তৈরি করলে মজুরিটা তাদের লাভ হয়ে দাঁড়ায় এটাই একটু সুবিধা।
ইত্তেফাক এসি
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক