টানা বৃষ্টি ও নদীতে বিপদ সীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে।
বন্যার পানি প্রবেশ করেছে উপজেলা সদরের কুমুদিনী হাসপাতালে। শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামও বন্যা কবলিত। মির্জাপুর পৌরসভা ও ৮ ইউনিয়নে বন্যার মারাত্মক অবনতি হয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় ত্রাণ সাহায্য না পেয়ে পানি বন্দি হাজার হাজার পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকায় বন্যা কবলিত হওয়ায় অসহায় পরিবারগুলো দুর্বীসহ জীবন যাপন করছেন।
আজ বুধবার মির্জাপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আমিরুল কাদের লাবন জানান, বংশাই ও লৌহজং নদীর পানির চাপ বেড়ে গিয়ে পৌরসভার পুষ্টকামুরী, ত্রিমোহন, গাড়াইল, কুমারজানি এলাকায় তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। অসহায় পরিবারগুলো এখন পর্যন্ত সরকারি কোন সাহায্য না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পৌরসভার আলহাজ্ব শফিউদ্দিন মিয়া এন্ড একাব্বর হোসেন টেকনিক্যাল কলেজ, আগধল্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুইচতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরাটি উচ্চ বিদ্যালয়সহ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে পানি ঢুকেছে। কুমুদিনী হাসপাতালে বন্যার পানি প্রবেশ করায় চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফ বলেন, ফতেপুর, লতিফপুর, মহেড়া, জামুর্কি, বহুরিয়া, ভাওড়া, ভাদগ্রাম, ওয়ার্শি, বানাইল এবং আনাইতারা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও ফসলি জমি ডুবে গেছে। এছাড়া বরাটি হাট, দেওহাটা গরুর হাট, বহুরিয়া হাট, মাঝালিয়া হাট, ফতেপুরসহ বেশ কয়েকটি হাটে পানি উঠায় বিপাকে পরেছেন ব্যবসায়ীরা। পানি বৃদ্ধির ফলে বংশাই নদীর ফতেপুর, হিলড়া আদাবাড়ি, থলপাড়া, বৈন্যাতলী, চাকলেশ্বর, গোড়াইল, গাড়াইল, পুষ্টকামুরী পুর্বপাড়া, বাওয়ার কুমারজানি, ত্রিমোহন, বান্দরমারা, যুগিরকোপা, রশিদ দেওহাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। নদী ভাঙ্গনে কয়েক শতাধিক পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। একই অবস্থা লৌহজং নদীর মাঝালিয়া, গুনটিয়া, চুকুরিয়া, বরাটি, দেওহাটা, কোর্ট বহুরিয়া, বহুরিয়া, কামারপাড়া, নাগরপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকা। নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকায় আঞ্চলিক রাস্তা ডুবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এদিকে নদীতে পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় এবং ভাঙ্গনের ফলে বংশাই নদীর থলপাড়া ব্রিজ, ত্রিমোহন বীর মুক্তিযোদ্ধা একাব্বর হোসেন ব্রিজ, লতিফপুর ব্রিজ, লৌহজং নদীর গুনটিয়া ব্রিজ, বরাটি বাবু দুঃখীরাম রাজবংশী ব্রিজ, পুষ্টকামুরী ব্রিজ, পাহাড়পুর ব্রিজ এবং ওয়ার্শি ব্রিজ হুমকির মুখে বলে জানা গেছে। পৌরসভার পুষ্টকামুরী গ্রামের ফজল হক, আনু মিয়া, ফজলু মিয়াসহ অনেকেই অভিযোগ করেছেন, বন্যায় নদী ভাঙ্গনে তাদের ঘরবাড়ি শেষ হয়েছে। থাকার কোন জায়গা নেই। এখন পর্যন্ত কোন সাহায্য পাননি। তাদের মত শতশত পরিবার এমন অভিযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. আবদুল গনি এবং মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবদুল মালেক মোস্তাকিম বলেন, টাঙ্গাইলের সদর, মির্জাপুর, বাসাইল, দেলদুয়ার, নাগরপুর, কালিহাতী, ভুয়াপুর এবং গোপালপুর উপজেলায় বন্যায় নদী ভাঙ্গন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষগ্রিস্তদের মাঝে সহায়তা প্রদান করা হবে।
ইত্তেফাক/এমআরএম
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক