মির্জাপুর উপজেলা সদর থেকে ১১টি ইউনিয়ন সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যমুনা ও ধলেশ্বরীর শাখা নদী বংশাই-লৌহজং নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির আরও মারাত্বক অবনতি হয়েছে। বানভাসি লোকজনের মধ্যে ত্রাণ না পৌঁছায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টিই এখন বন্যা কবলিত। বন্যার পানি প্রবেশ করেছে উপজেলা সদরের কুমুদিনী হাসপাতাল, হাসপাতাল রোড, শেখ রাসেল স্টেডিয়ামসহ পৌরসভার অধিকাংশ এলাকায়।
আজ সোমবার বিভিন্ন ইউনিয়নের বন্যা কবলিতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন পরিবার পরিজন নিয়ে বিভিন্ন ব্রিজ-কালভার্ট, উচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। ত্রাণ তৎপরতা নেই বললেই চলে। বন্যার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আঞ্চলিক রোডের মধ্যে মির্জাপুর-ওয়ার্শি-বালিয়া রোড, মির্জাপুর-ভাওড়া-কামারপাড়া রোড, দেওহাটা-বহুরিয়া-ধানতারা রোড, কুরনী-ফতেপুর রোড, মির্জাপুর-ভাদগ্রাম-কেদারপুর রোড, কদিমধল্যা-বরাটি রোড, বানিয়ারা-বাসাইল রোড, ডুবাইল-মহেড়া-ফতেপুর রোড, পাকুল্যা-দেলদুয়ার রোড, কাটরা-উফুলকী রোডসহ অধিকাংশ এলাকার আঞ্চলিক রোড ডুবে গিয়ে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া কুমুদিনী হাসপাতাল এবং শেখ রাসেল মিনিস্টেডিয়ামে পানি প্রবেশ করেছে। এক দিকে করোনা অপর দিকে বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে কোরবানীর পশু নিয়ে চরম বিপাকে দেড় শতাধিক খামারী।
জামুর্কি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী এজাজ খান চৌধুরী রুবেল ও মহেড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বাদশা মিয়া জানান, ফতেপুর, লতিফপুর, মহেড়া, জামুর্কি, বহুরিয়া, ভাওড়া, ভাদগ্রাম, ওয়ার্শি, বানাইল এবং আনাইতারা ইউনিয়নের আঞ্চলিক সড়কগুলো তলিয়ে গেছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. হারুন অর রশিদ ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন জানান, বংশাই ও লৌহজং নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পৌরসভার আলহাজ্ব শফিউদ্দিন মিয়া অ্যান্ড একাব্বর হোসেন টেকনিক্যাল কলেজ, মির্জাপুর মহিল ডিগ্রি কলেজ, আগধল্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুইচতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরাটি উচ্চ বিদ্যালয়সহ দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে পানি ঢুকেছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানিয়েছেন, উপজেলার ৪০০ কি. মি. পাকা-আধা পাকা তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকার রাস্তার তালিকা তৈরী করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবদুল মালেক মোস্তাকিম এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) মীর্জা মো. জুবায়ের হোসেন বলেন, বন্যা কবলিত এবং নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সাহায্য করা হবে।
ইত্তেফাক/আরকেজি
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক