একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে শেয়ার বাজারে কার্যকর করা হয় ফ্লোর প্রাইস। ফ্লোর প্রাইসের আগে কোনো কারণ ছাড়াই শেয়ারের দাম নিম্নগামী ছিল। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা মূলধন হারিয়ে তখন দিশেহারা।
সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যখন আরো মূলধন হারানোর ভয়ে কাতর; অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে শঙ্কিত তখন আশার আলো হয়ে উদয় হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন তাঁর সরাসরি হস্তক্ষেপে এই ফ্লোর প্রাইস চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে এই ফ্লোর প্রাইস নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এরমধ্যে একটি গ্রুপ ফ্লোর প্রাইস আরো দীর্ঘদিন কার্যকর থাকার যুক্তি দেখাচ্ছে। অন্য একটি গ্রুপ এটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বেশির ভাগই ফ্লোর প্রাইসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের যুক্তি হলো, যেই পরিস্থিতিতে ফ্লোর প্রাইস কার্যকর করা হয়েছে সেই পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি, বরং আরো অবনতি হয়েছে। মহামারি করোনার কারণে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে।দেশে ৮৬ শতাংশ মানুষ অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত। আবার যারা প্রাতিষ্ঠানিক কাজে আছেন তারাও অনেকে চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছেন।
ইতিমধ্যে অনেক চাকরিজীবীর বেতন কমানো হচ্ছে। বহু মানুষ ভাড়া দিতে না পেরে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা অব্যাহত আছে। কতদিন এরকম থাকবে তারও হিসাব নাই। সেখানে শেয়ার বাজার কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে? সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দাবি সামাজিক নিরাপত্তা, সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে না আসা পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইস কার্যকর থাকা উচিত। যারা এটির বিরুদ্ধে কথা বলেন তারা সুযোগ সন্ধানী। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করার চিন্তায় বিভোর।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের একজন মিরপুরের মো. রহমাতউল্লাহ ও মো. শাখাওয়াত ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেঁচে থাকতে কুচক্রী মহল মহামারির এই সময়ে ফ্লোর প্রাইস বাতিলের সুযোগ পাবেন না।’
মো. তৌহিদুর আলম আলম নামে অপর একজন বলেন, ‘সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে অনুদান দিচ্ছে। এখন এই ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দিলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। মূলধন হারিয়ে কেউ কেউ আত্মহত্যাও করতে পারেন।’
ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার শঙ্কা বেশি দেখা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) বর্তমান কমিশনার ড. মিজানুর রহমানের এক মন্তব্যে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বাজেটোত্তর ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বাজারের স্থবিরতার জন্য বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার ফ্লোর প্রাইসকে অন্যতম প্রধান বাধা হিসেবে আখ্যা দিয়ে এটি তুলে দেওয়ার দাবি বলছেন। বিষয়টি আমরা বিবেচনা করব।’
তিনি আরো বলেন, ‘আইনগত প্রক্রিয়ায় অবাধ ও উন্মুক্তভাবে বিনিয়োগকারীরা লেনদেনের সুযোগ পাবেন বলে আমরা আশা করছি।’
তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রুবাইয়াত-উল-ইসলাম শিবলী জানান, ‘এই পরিস্থিতিতে ফ্লোর প্রাইস ওঠানোর পরিকল্পনা কমিশনের নেই। যেই বিশেষ পরিস্থিতির কারণে ফ্লোর প্রাইস কার্যকর করা হয়েছিল তার উন্নতি হয়নি। মার্কেট স্থির না হওয়া পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইস থাকবে। আসলে মার্কেট ভালো হলে ফ্লোর প্রাইস কখন উঠে গেল আর থাকল তখন এটা নিয়ে কোনো কথা উঠবে না।’
যেসব ব্যাংককে শেয়ার বাজারে ২০০ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করতে বলা হয়েছিল তা কী পর্যায়ে আছে জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ ব্যাপারে গভর্নরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে ব্যাংগুলোকে চিঠি দিয়েছেন। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলো কী পরিমাণ বিনিয়োগ করছে তা মনিটরিংয়েরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
আগে ফ্লোর প্রাইস শুধু বুক বিল্ডিংয়ে নির্ধারণ থাকলেও দেশে সেকেন্ডারি মার্কেটে ফ্লোর প্রাইস প্রথম চালু হয় এ বছরের ১৯ মার্চ। ফ্লোর প্রাইস নির্ধারিত শেয়ার বাজারে চাহিদা বা যোগান যেমনই হোক তা থাকে নিয়ন্ত্রণে। ১৯ মার্চের আগের ৫ কার্যদিবসের একটা শেয়ারের মূল্যকে গড় করে নির্ধারিত হয়েছিলো শেয়ার দাম। সূচকের হিসেবটিও ছিলো একই। আর এই ফ্লোর প্রাইসের নিচে শেয়ার বা ইনডেক্স আশার আশঙ্কা নেই। তাই সবচেয়ে মারণাস্ত্র ফোর্স সেল আপততো আর হচ্ছে না।
এছাড়াও লোয়ার প্রাইসে লাগানো হয়েছে ৫% সার্কিট ব্রেকার। অর্থাৎ, এখন কোনো শেয়ার একদিনে ৫% এর বেশি কমতে পারবে না আর বাড়তে পারবে আগের মতোই ১০%। এ আইন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছেন বিএসইসি। অবশ্য ব্লক মার্কেটে ফ্লোর প্রাইস ছাড়াই লেনদেনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসে নতুন কমিশন ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়।
ইত্তেফাক/জেডএইচ
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক