মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনা ভাইরাসের মহামারিকে প্রথম থেকেই আমলে নিতে চাননি। এমনকি তিনি বিভিন্ন সময় বলেছেন, এই ভাইরাসে কিছু হবে না, এমনি এমনি এই ভাইরাস চলে যাবে। যখন ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকল তখনো উলটাপালটা মন্তব্য করেছেন। কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। ইনজেকশন দিয়ে জীবাণুনাশক ঢুকিয়ে দেওয়ারও মতামত তুলে ধরেন। জনগণকে মুখে মাস্ক পরতে নিরুত্সাহিত করেছেন। এমনকি নিজেও মুখে মাস্ক ব্যবহার করেননি। কিন্তু গত এক মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ২০ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন করে মৃতের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তিনি স্বীকার করেছেন, করোনা মহামারি ভালো হওয়ার আগে আরো খারাপ হতে পারে। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস যেভাবে মহামারি আকারে ছড়িয়ে গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে এর পরিণতি আরো খারাপ হতে পারে। যে ধরনের বিষয় আমি বলতে পছন্দ করি না, কিন্তু এটা সে ধরনেরই কিছু। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী সবাইকে মুখে মাস্ক ব্যবহার করার অনুরোধ করেছেন তিনি।
ট্রাম্প বলেছেন, মাস্ক ব্যবহারের প্রভাব রয়েছে। এর আগে মাস্ক ও জীবাণুনাশককে অস্বাস্থ্যকার হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন তিনি। যদিও হোয়াইট হাউজের করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় কাজ করা টাস্কফোর্সের সদস্যরা বারবার তাকে চাপ দিচ্ছিলেন, জনগণের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং বিভিন্ন বিধিনিষেধের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করতে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সব নাগরিককে সামাজিক দূরত্ব মানার জন্য বলছি। যদি সামাজিক দূরত্ব নাও মানা হয় তাহলে সবাই যেন মাস্ক পরে।’
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, সংক্রমণের সংখ্যা এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনসংক্রান্ত বিভিন্ন জরিপে ধারাবাহিকভাবে পিছিয়ে থাকার পর অবশেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সত্য স্বীকার করে নিতে শুরু করেছেন। প্রেস কনফারেন্সে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে পুনরায় জেতার জন্য প্রচারণা শুরু করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই এখন মার্কিনিদের দেখাতে চাইছেন যে, তিনি মহামারির ব্যাপারে এখন অনেক বেশি ‘সিরিয়াস’। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেরিতে খোলার ব্যাপারে তিনি মত দিয়েছেন। এখন জনসমাগম ঠিক হবে না দাবি করে নির্বাচনের আগে জ্যাকসনভিলে রিপাবলিকান পার্টির কনভেনশনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। যদিও হোয়াইট হাউজ বলছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থান ও কথায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। প্রেস সেক্রেটারি কাইলেগ ম্যাকয়েন্যানি বলেন, তিনি সুর বদলাননি।
সিএনএন বলছে, আসলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বক্তব্য আসার কারণ হলো প্রচারণা সহযোগীরা দেখিয়েছেন যে, জাতীয় জরিপে তিনি শুধু জো বাইডেনের থেকে বড় ব্যবধানে পিছিয়ে নেই বরং রিপাবলিকানদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে তাকে কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে। এছাড়া করোনা ভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেভাবে কাজ করছেন তাতে খুশি নন বেশির ভাগ মার্কিন নাগরিক।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একজন উপদেষ্টা বলেন, আমার মনে হয় শেষ পর্যন্ত তিনি এটি বুঝতে শুরু করেছেন যে, করোনা মহামারি মোকাবিলার বিষয়টি তার রাজনৈতিক অবস্থানকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এক্ষেত্রে তিনি যদি ইতিবাচক কোনো কিছু দেখাতে পারেন তাহলে সেটা তার জয়ের সম্ভাবনাকে আরো জোরালো করতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই অবস্থান একটু দেরিতে এসেছে। প্রেসিডেন্ট যেভাবে বলুন না কেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সেটা আর তথ্য গোপন করে ঢেকে রাখার সুযোগ নেই। খবরে বলা হয়েছে, জাতীয় জরিপ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জো বাইডেনের থেকে ১২ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে আছেন।
সম্প্রতি সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব কিছু করেন পরবর্তী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসার জন্য। তাই বলা চলে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই পরিবর্তন রাজনৈতিক ফায়দা বিবেচনায়!
ইত্তেফাক/এএম
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক